পথেঘাটে প্রাণের উৎসব সেতুর এপার ওপারে বর্ণিল সাজ

হাওর বার্তা ডেস্কঃ রাত পোহালেই উদ্বোধন হতে যাচ্ছে পদ্মা বহুমুখী সেতু। বহুকাল থেকে দেখে আসা স্বপ্ন রূপ নেবে বাস্তবে। সেতুর ওপর দিয়ে কয়েক মিনিটেই দেওয়া যাবে প্রমত্তা পদ্মা পাড়ি।

এ নিয়ে উচ্ছ্বাসে ভাসছে পদ্মাপারের মানুষ থেকে শুরু করে দক্ষিণের ২১ জেলার মানুষ। পথে-ঘাটে, চায়ের কাপে, আড্ডায়-আলোচনায় সেই আনন্দেরই অনুরণন। চোখেমুখে স্বপ্নপূরণের আলোকছটা।

প্রাণের সে উৎসবের ছটা পড়েছে সবখানে। সড়ক-মহাসড়ক, রাস্তাঘাট, হাটবাজার ও অলিগলি ছেয়ে গেছে পোস্টার, ব্যানার, বিলবোর্ড আর তোরণে। যতদূর চোখ যায় যেন রঙের ছড়াছড়ি। বিভিন্ন স্থানে করা হয়েছে আলোকসজ্জা। মরিচবাতিতে উজ্জ্বল সেতু, নৌকা আর জাতীয় পতাকার প্রতিকৃতি।

মাওয়া প্রান্তে সেতু উদ্বোধনের পর সেতু পেরিয়ে দক্ষিণ প্রান্তে কাঁঠালবাড়ি ঘাটে জনসভায় ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পদ্মা সেতুর আদলে সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে বিশাল নান্দনিক মঞ্চ। শুধু কি মঞ্চ, জনসভার পুরো এলাকাই যেন সাজে রঙিন।

নিরাপত্তাজনিত কারণে জনসভা মঞ্চ, পদ্মা সেতু ও এর ভায়াডাক্ট এবং আশপাশের এলাকায় বৃহস্পতিবার সাধারণ মানুষকে ভিড়তে দেয়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

কিন্তু উচ্ছ্বাসে ভাসা মানুষকে ঠেকাবে কে! যত কাছে যাওয়া যায়-সে নদী হয়ে বা সড়কে, মানুষ ছুটে এসেছেন, তুলেছেন ছবি। দূরে হলেও পদ্মাপারে তাই ছিল হাজারো পদচিহ্ন।

এ দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে ‘পদ্মা সেতু দেয়ালে, খেয়ালে’ স্লোগানে শরীয়তপুর সদর উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বৃহস্পতিবার সকালে তুলাসার সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের পশ্চিম পাশের দেয়ালে উদ্বোধন করা হয়েছে দেয়ালিকা।

শিমুলিয়া ঘাটে শোভাযাত্রা করেছে টুরিস্ট পুলিশ। এদিকে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও জনসভা সফল করতে সংশ্লিষ্টরা এদিন ছুটিয়েছেন ঘাম। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, জনসভার স্থান ও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের স্থানে চলছিল শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :

ভাঙ্গা (ফরিদপুর) : সড়ক-মহাসড়ক, রাস্তাঘাট, হাটবাজার ও অলিগলি পোস্টার, ব্যানার আর বিলবোর্ডে স্থান পেয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী ও সংসদ-সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সনের প্রতিকৃতি।

বিভিন্ন পয়েন্টে আলোকসজ্জায় সন্ধ্যার পর সৃষ্টি হয়েছে উৎসবের আমেজ। চলছে দলীয় বৈঠক, আলোচনা সভা, মিছিল, গণসংযোগ ও মাইকিং।

টাইলস ব্যবসায়ী জাতারিয়া জানান, ৩ হাজার বিলবোর্ড, ব্যানার, পোস্টার লাগিয়েছি। কাল (আজ) পর্যন্ত বিলবোর্ড লাগানো হবে। ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আজিমউদ্দিন জানান, সেতু উদ্বোধন ঘিরে এ অঞ্চলে প্রাণচাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন অনুষ্ঠান অনুষ্ঠান যেন নির্বিঘ্নে হয় সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।

শরীয়তপুর : তুলাসার সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের দেয়ালে দেয়ালিকার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক পারভেজ হাসান।

উপস্থিত ছিলেন জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শহীদ হোসেন, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনদীপ ঘড়াই এবং সদর উপজেলার ২৩টি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা পদ্মা সেতুর ছবি ও নানান রকম কবিতা লিখে দেয়ালে সেটে দেন।

বর্ণিল রূপে সেজেছে শরীয়তপুর শহরসহ ৬ উপজেলা। রঙ-বেরঙের ব্যানার, ফেস্টুন, নিশান, তোরণের পাশাপাশি চোখ ধাঁধানো আলোকসজ্জায় উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।

শরীয়তপুর-১ আসনের সংসদ-সদস্য ইকবাল হোসেন অপু বলেন, জনসভা সফল করতে শরীয়তপর জেলা শহরসহ ৬ উপজেলা থেকে মুক্তিযোদ্ধাসহ ১ লাখ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী জনসমাবেশে যোগ দেবেন।

শিবচর (মাদারীপুর) : উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. সেলিম জানান, এক্সপ্রেসওয়েকে সাজানো হয়েছে দলীয় নেত্রীর ব্যানার পোস্টার দিয়ে। মোড়ে মোড়ে তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি দিয়ে।

দিনরাত কাজ করছে শ্রমিকরা। মঞ্চের পাশের পদ্মা নদীতে নদীতে বিভিন্ন রংবেরঙের নৌকা সাজানো হয়েছে। এলাকার লাখ লাখ মানুষ প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত জনসভার আশপাশের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখেন।

লৌহজং (মুন্সীগঞ্জ) : ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের পাশে ছোট বড় বিলবোর্ডগুলো এখন সুসজ্জিত দলীয় নেতাকর্মীদের পোস্টার, ফেস্টুন আর ব্যানারে। কেউ কেউ জায়গা খালি না পেয়ে বাঁশের সাহায্যে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা ব্যানার টাঙিয়ে রেখেছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিশাল আকৃতির প্রতিকৃতি শোভা পেয়েছে উদ্বোধন স্থলে। কেরানীগঞ্জ আব্দুল্লাহপুর থেকে শুরু করে ধলেশ্বরী টোল প্লাজায়, কুচিমোড়া, নিমতলা স্ট্যান্ডগুলো আশপাশে এবং হাইওয়ের কিনারে শোভা পাচ্ছে অন্যান্য জেলার নেতাকর্মীদের ব্যানারও।

এদিকে শিমুলিয়া ঘাটে বৃহস্পতিবার বিকালে র‌্যালি করেছে বাংলাদেশ টুরিস্ট পুলিশ মুন্সীগঞ্জ পদ্মা ব্রিজ জোন। প্রধান অতিথি ছিলেন টুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী, বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত ডিআইজি আবু সুফিয়ান, সঞ্জয় কুমার কুন্ড।

উপস্থিত ছিলেন এসপি আলমগীর কবির, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোমেনা আক্তার, টুরিস্ট পুলিশের মুন্সীগঞ্জ পদ্মা ব্রিজ জোনের ইনচার্জ শাহদাৎ হোসেন প্রমুখ।

ভেদরগঞ্জ (শরীয়তপুর) : শরীয়তপুরের পদ্মা তীরবর্তী ঘাটগুলোতে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন, সামাজিক সংগঠন ও ব্যক্তিগত উদ্যোগ বাহারি রংয়ে সাজানো হচ্ছে নৌকা, লঞ্চসহ বিভিন্ন নৌযান।

উদ্দেশ্য পদ্মা সেতু দেখা ও সেতু উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া। নড়িয়া উপজেলা ও সখিপুর থানাধীন গৌরাঙ্গবাজার, দুলারচর, মোনাই হাওলাদার ঘাট, তারাবুনিয়া স্টেশন, নড়িয়া ঘাট, সুরেশ্বর, মুলফৎগঞ্জ, ওয়াপদা ঘাটে সারি সারি নৌকা সাজানোর কাজ করতে দেখা গেছে। পদ্মা সেতুর ছবি, রঙিন পতাকা, ফুলে সাজানো হচ্ছে সেসব।

দক্ষিণ উপকূল (পটুয়াখালী) : সাগর পারের জেলা পটুয়াখালী ও বরগুনায়ও উৎসবের আমেজ বইছে। শুধু আ.লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যেই না, সব শ্রেণি-পেশার মানুষের মাঝে ব্যাপক উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে রিজার্ভ করা হয়েছে ১৬টি দোতলা লঞ্চ।

চট্টগ্রাম ব্যুরো : চট্টগ্রামেও সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলো প্রদর্শনী, আলোচনা সভা ও কনসার্ট, আতশবাজি ডিসপ্লেসহ নানা উৎসবের আয়োজন করছে।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন কাল সকালে নগরীর কাজীর দেউড়ি ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে এবং চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে।

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) কাল খুলশি বিজিএমইএ ভবনের মাহাবুব আলী হলে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচারের ব্যবস্থা করেছে।

কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) : ঢাকার জুরাইন থেকে পদ্মা সেতুর দূরত্ব ৩৫ কিলোমিটার। এ পথে নির্মাণ করা হয়েছে এশিয়ার অন্যতম সুন্দর মহাসড়ক ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে।

মহাসড়কটি সেজেছে বর্ণিল সাজে। সড়কের দুই পাশে ঝুলছে অসংখ্য রঙিন ব্যানার, ফেস্টুন। এতে স্বাগত জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানানো হয়েছে।

যাত্রী ছাউনিগুলো লাইটিং করা হয়েছে। লাল-সবুজ রঙের টিস্যু ব্যবহার করে এতে জাতীয় পতাকাকে তুলে ধরা হয়েছে। মহাসড়কটির কিছু দূর পরপর রঙ-বেরঙের ফ্ল্যাগ বসানো হয়েছে।

উপজেলা পরিষদ চত্বরকে সাজানো হয়েছে রঙিন আলোকসজ্জায়। কাল সকাল থেকে সেখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

গাজীপুর : গাজীপুর জেলা প্রশাসনের ভাওয়াল সম্মেলন কক্ষে বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান জানান, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের চিত্র সরাসরি গাজীপুর রাজবাড়ি মাঠে বড় পর্দায় দেখানো হবে। তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে বর্ণাঢ্য র‌্যালি, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আতশবাজি ফোটানো হবে।
 

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর